• প্রকাশিত : ২০২২-১১-১০
  • ৩২২ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক

রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধের ফলে এই দুটি দেশ থেকে গম আমদানির পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ দ্বিতীয় প্রধান খাদ্য গমের চাহিদা মেটাতে, এমনকি উচ্চ মূল্যে হলেও বিকল্প বিদেশী কোন উৎস খোঁজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রনালয়ের খাদ্য আমদানির তত্তববধানের দায়িত্বে নিয়োজিত একজন কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে আমরা রাশিয়া এবং ইউক্রেন থেকে কোন গম পাচ্ছি না। এমন এক পরিস্থিতিতে আমাদের বেসরকারি খাতকে নতুন উৎস খুঁজতে হচ্ছে, এমনকি তাতে দাম কিছুটা বেশি দিয়ে হলেও।
মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মাহবুবুর রহমান আরও জানান, এ পর্যন্ত বেসরকারি আমদানিকারকগণ বুলগেরিয়া, রোমানিয়া এমনকি রাশিয়া থেকেও ৬.৫ লাখ টন গম আমদানির জন্য চুক্তি করেছে এবং এসব চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ৩.১৩ লাখ টন গম পেয়েছে।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, বাকি গম এই বছরের ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ আসবে।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বার্ষিক গড় গম উৎপাদনের পরিমান প্রায় ১০ লাখ (১ মিলিয়ন) টন এবং বার্ষিক চাহিদার পরিমান ৭৫ লাখ টন। গমের বাকী চাহিদা আমদানির মাধ্যমে মেটানো হয়, যার ৬২ শতাংশ আসে রাশিয়া, ইউক্রেন এবং ভারত থেকে।
খাদ্য মন্ত্রকের কর্মকর্তারা বলেছেন, বিশ্বব্যাপী সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে অভ্যন্তরীণ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারতও তাদের গম রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে।
যুদ্ধ শুরু হওয়ায় পর রাশিয়া সারা বিশ্বে এর গম রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছিল কিন্তু পরে সাময়িক নীতিগতভাবে এই বিধিনিষেধ শিথিল করলে বাংলাদেশ এর অধীনে চলতি বছরের মে মাসে ১ লাখ টন গমের একটি চালান পেয়েছিল।
সর্বশেষ মে মাসে ৪৬ হাজার ৬৫৫ টন ইউক্রেনীয়গম পায় বাংলাদেশ।
সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, তারপর থেকে কোনো দেশ থেকে কোনো গম পাওয়া যায়নি।
কর্মকর্তারা জানান, গত কয়েক মাস ধরে গমের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে আসছে। যার ফলে আটাসহ বেকারি আইটেমগুলোর দামও বাড়ছে।
খাদ্য কর্মকর্তারা বলেন রাশিয়ান এবং ইউক্রেনীয় গম অনেক কম দামে রপ্তানি করা হত, এবং যখন ভারত এটি সর্বনিম্ন দামে সরবরাহ করতো। তবে, পরিস্থিতি বাংলাদেশকে কানাডাসহ অন্যান্য দেশে গমের সন্ধান করতে বাধ্য করেছে।
গতকাল ৯ নভেম্বর আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন গমের গড় দাম ছিল $৩৫৩.৬৭ মার্কিন ডলার যা ২০২১ সালের দিকে ২৫৮.৬৮ ছিল।
গম আমদানীকারকরা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এদিকে, বাংলাদেশী মুদ্রার মান হ্রাস পাওয়ায় সংকটটিকে আরো গভীর করে তুলেছে।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক সংকটময় মুহূর্তে যে কোন ধরনের মহামারি পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার অভ্যন্তরীণ খাদ্য সরবরাহ বাড়াতে খাদ্য আমদানি বাড়িয়ে ও খাদ্য সংগ্রহ করাসহ সব ধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ খাদ্য আমদানি ও স্থানীয় খাদ্য সংগ্রহ কার্যক্রম বাড়িয়ে, খাদ্য সংকট মেকাবিলা করতে প্রস্তুত রয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধতি দীর্ঘয়িত হওয়ায়- বিশ্ব অর্থনীতি এখন একটি মহাবিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে।’
সাধন আরো বলেন, উৎপাদনের দিক দিয়ে দেশের দ্বিতীয় প্রধান প্রজাতির ধান আমনের উৎপাদন প্রত্যাশার চেয়েও ভাল হয়েছে। ক্ষেতের পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী মাস থেকে ধান কাটা শুরু হবে।
অধিক উৎপাদনের কারণে বাংলাদেশ মূলত বোরো ধানের ওপর নির্ভরশীল। এটি বাংলাদেশের প্রধান উৎপাদিত ধান। এই ধান সংগ্রহ করার হয় এপ্রিল ও জুন মাসের মধ্যবর্তী সময়ে এবং রোপন করা হয় ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির গোড়ার মধ্যবর্তী সময়ে।
দেশের মোট উৎপাদিত ধানের ৫৫ শতাংশ আসে বোরো ধান থেকে।
তিনি আরো বলেন, ‘তবে খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে, আমরা বিদেশে থেকে গমের পাশাপাশি ধান সংগ্রহের ওপরও জোর দিয়েছি। এছাড়াও মুনাফার আশায় মজুদদারীর বিরুদ্ধে আমরা আমাদের নজরদারি বৃদ্ধি করেছি।’
মন্ত্রী বরেন, কেউ যেন পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কৃত্রিমভাবে খাদ্য সংকট সৃষ্টি করতে না পারে- সে লক্ষ্যে সারা দেশের বিভিন্ন খাদ্য বাজারে নজরদারী বাড়াতে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে বেশ কয়েকটি নজরদারী দল গঠন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, খাদ্য মজুদ বাড়াতে সরকার ১০ লাখ টন চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে ৫ দশমিক ৫০ লাখ টন ইতোমধ্যেই পৌঁছে গেছে এবং অবশিষ্ট ৪ দশমিক ৫০ লাখ টন চাল বছরের শেষ নাগাদ পৌঁছে যাবে।
খাদ্য কর্মকর্তারা বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে, আমদানি দ্রুতগতিতে হ্রাস পেয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
#
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat