ব্রেকিং নিউজ :
সিনেমা-টিভি খাতে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সহযোগিতা ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করা হবে : তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী স্বনির্ভর দেশ গড়তে প্রাণি সম্পদের উৎপাদন বাড়াতে হবে : এনামুল হক শামীম জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় অর্থ পেতে বিসিডিপি গঠন করবে সরকার : পরিবেশমন্ত্রী শিপ রিসাইক্লিং শিল্পে কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতকরণে শিল্প সচিব ও যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত হাইকমিশনারের আলোচনা বিএনপি নেতারা সন্ত্রাসীদের সুরক্ষা দেওয়ার অপচেষ্টা করছে : ওবায়দুল কাদের ৫০ বছরে বাংলাদেশের সফলতা চোখে পড়ার মতো : রেহমান সোবহান শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সম্মানি বৃদ্ধির প্রস্তাব সরকারের বিবেচনাধীন বোতলজাত সয়াবিনের দাম বাড়লো ৪ টাকা, খোলা তেল কমেছে ২ টাকা বাংলাদেশে গ্রিসের দূতাবাস হচ্ছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী শপথ নিলেন পিএসসি’র সদস্য প্রদীপ কুমার পাণ্ডে
  • প্রকাশিত : ২০২২-০৫-০৫
  • ৩৯৯ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক

নাটোর জেলার নর্থ বেঙ্গল চিনিকলের গণহত্যা দিবস আজ ৫ মে। ১৯৭১ সালের এই দিনে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাক হানাদার বাহিনী চিনিকল অবরুদ্ধ করে তৎকালীন প্রশাসকসহ ৪২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে।
শহীদদের স্মরণে দিবসটি শহীদ সাগর দিবস হিসেবে পালিত হয়েছে আজ।
মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী উত্তর বঙ্গের হেডকোয়ার্টার হিসেবে নাটোরে অবস্থান নেয়। ৫ মে সকালে তারা লালপুরের গোপালপুরে যাত্রা করে। চিনিকলের কাছাকাছি পৌঁছে গোপালপুর রেল স্টেশনের রেল ক্রসিং এ বাঁধার সম্মুখীন হয়। স্টেশনের পরিত্যক্ত ওয়াগন টেনে এনে রেল ক্রসিং এ ব্যারিকেড দেওয়া হয়। এই ব্যারিকেডের সাথে জড়িতদের হত্যার মাধ্যমে শুরু হয় হত্যাযজ্ঞ। হানাদার বাহিনী নর্থ বেঙ্গল চিনিকল ঘিরে ফেলে। চিনিকলের সবগুলো গেটে তালা লাগিয়ে অবরুদ্ধ করে অবাঙ্গালিদের যোগসাজশে বাঙ্গালিদের সনাক্ত করে চিনিকলের এক নম্বর গেট সংলগ্ন পুকুর ঘাটে নিয়ে যায়। তাদেরকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে নির্মমভাবে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যার পর লাশগুলো পুকুরে ফেলে দেয়।
সেই দিনের হত্যাযজ্ঞে কোন অবাঙ্গালি যাতে মারা না পড়ে সে জন্যে তাদের সবার মাথায় সাদা রুমাল বাঁধা ছিল।
পাক হানাদার বাহিনীর লোমহর্ষক হত্যাযজ্ঞের নীরব স্বাক্ষী বুলেটবিদ্ধ হয়ে লাশের স্তুপের নিচে চাপা পড়েও সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে ছিলেন কয়েকজন। তাদের একজন এই চিনিকলের পাওয়ার হাউজের এসবিএ পদে চাকুরী করতেন খন্দকার জালাল আহমেদ। কিছুদিন আগে না ফেরার দেশে চলে যাওয়া খন্দকার জালাল আহমেদের সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায় ওইদিনের ঘটনার বিবরণ। তিনি বলেন, আনুমানিক সকাল সাড়ে দশটা। ডিউটি করছি। দুজন পাক সেনা আমার দুপাশে এসে দাঁড়ালো। একজন পিঠে রাইফেল ঠেকিয়ে বললো, ‘ইয়ে বাঙ্গালি চলো, মিটিং হোগা, মিটিং মে চলো’। এসময় মাথায় সাদা রুমাল বাঁধা মঞ্জুর ইমান নামে একজন অবাঙ্গালি কর্মচারী বাঙ্গালিদের সনাক্ত করে দিচ্ছিল। এদিকে মিলের প্রশাসক আনোয়ারুল আজিমসহ অন্যান্যদের ধরে এনে মাটিতে বসিয়ে রাখে। একজন পাক অফিসার আজিম সাহেবকে লক্ষ্য করে বলে, ‘কিসনে মেজর আসলামকে মারা হায়’? তিনি বলেন, ‘জানিনা’।
নরপশুরা আমাদেরকে অফিসার্স কোয়ার্টারের পুকুর ঘাটে নিয়ে গিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করায়। তখনই বুঝতে পারলাম, নিশ্চিত মারা যাচ্ছি। কয়েক মিনিটের মধ্যে ঘাতকদের ১৩টি স্বয়ংক্রিয় এলএমজি এক সঙ্গে আমাদের ওপর গর্জে উঠে। গগনবিদারী চিৎকারে আকাশ-বাতাসে আর্তনাদ ছড়িয়ে পড়ে। মুহুর্তের মধ্যে পুকুর ঘাট লাশের স্তুপে পরিণত হয়। তাজা রক্তের স্রোতে রক্ত রাঙা হয়ে যায় পুকুরের পানি। নিথর নিস্তব্ধ হয়ে যায় প্রকৃতি। মৃত্যু নিশ্চিত করতে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে পুকুরের মধ্যে গড়িয়ে দেয় মরদেহগুলো। এক সময় জ্ঞান ফিরে দেখি, আমার মাথাটা পুকুর ঘাটের সিড়ির ওপরে এবং শরীরের অর্ধেকটা রক্তে রঞ্জিত পানির মধ্যে ডুবে আছে। লাশের স্তুপের মধ্যে উল্টিয়ে-পাল্টিয়ে জীবন্ত কাউকে খুঁজে ফিরছে আমার এক সহকর্মী মেহমান আলী। বুঝলাম, তিনিই আমাকে লাশের স্তুপের মধ্যে থেকে উদ্ধার করেছেন। বহু কষ্টে উঠে বসতেই দেখতে পেলাম, পাশে পড়ে আছে ছোট ভাই মান্নানের লাশ। সে বিভৎস দৃশ্যের কথা মনে হলে আজও শিউরে উঠি, গায়ে কাঁটা দিয়ে লোম খাড়া হয়ে উঠে।
শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে শহীদ সাগর চত্বরে স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘর নির্মিত হয়েছে। ১৯৭৩ সালের ৫ মে মিলের প্রশাসক লে: আনোয়ারুল আজিমের স্ত্রী বেগম শামসুন্নাহার শহীদ সাগর চত্ত্বরে স্মৃতিসৌধ উদ্বোধন করেন।
স্মৃতি ফলকে ৪২ জন শহীদের নামের তালিকা লিপিবদ্ধ করা আছে। আনোয়ারুল আজিমের নামানুসারে গোপালপুর রেল স্টেশনের নামকরণ করা হয় আজিমনগর স্টেশন। মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানের স্বীকৃতি হিসেবে শহীদ আনোয়ারুল আজিমকে ২০১৮ সালে সরকার স্বাধীনতা পদক (মরনোত্তর) প্রদান করে। প্রতিবছর শহীদদের আতœীয়-স্বজন, চিনিকলের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয় লোকজন ৫ মে শহীদ সাগর চত্বরে সমবেত হন।
তমালতলা কৃষি ও কারিগরি কলেজের উপাধ্যক্ষ বাবুল আকতার বলেন, ৩০ মার্চ লালপুরের ময়নায় পাক হানাদার বাহিনীর সাথে প্রতিরোধ যুদ্ধে ৪০জন বাঙালী এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেজর খাদেম হোসেন রাজাসহ সাতজন নিহত হন। মেজর রাজাসহ সাতজন হত্যার প্রতিশোধ এবং নর্থ বেঙ্গল চিনিকলের প্রশাসক লে. আনোয়ারুল আজিম বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতার কারনেই সম্ভবত শহীদ সাগর হত্যাযজ্ঞ।
নর্থ বেঙ্গল চিনিকল হাইস্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র রিদওয়ান হোসেন জানায়, নতুন প্রজন্ম কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করে শহীদ সাগরের এই আত্মদানকে। চিনিকলের ওই সময়ের সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা শহীদ মোছাদ্দারুল হক দেশের জন্যে প্রাণ দিয়েছেন বলে গর্ববোধের কথা জানালো তাঁর নাতনী একই স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্রী ফাইজা ফারহা।
শহীদ সাগর প্রাঙ্গনে প্রবেশ করলে ফুলের গাছগুলো মনকে পবিত্র করে দেয়। শত বছরের প্রাচীন আর আকাশ ছোঁয়ার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা ১৩টি পাম গাছ যেন বিষন্নতা ছড়িয়ে দিচ্ছে, কেঁদে ওঠে মন। পুকুরের চারিদিকে গাছের তলায় শহীদদের মরদেহগুলো গণকবর দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দু:খের বিষয়, এসব কবর চিহ্নিত করা নেই। কবরগুলো চিহ্নিতকরণের পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে প্রত্যাশা স্থানীয়দের ।
প্রতিবছর শহীদদের আতœার স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদনের সুযোগ করে দেয় নর্থ বেঙ্গল চিনিকল কর্তৃপক্ষ। শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতি সৌধ প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয় আলোচনা সভা, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও দোয়া মাহফিল। এবারও চিনিকল কর্তৃপক্ষ একই কর্মসূচির আয়োজন করে। চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিসুল আজমের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মো: শহিদুল ইসলাম বকুল।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
#
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat