• প্রকাশিত : ২০২২-০১-২৪
  • ৪২৭ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক

ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পাওয়ার তথ্য গোপন করায়  নিষিদ্ধ হতে  যাচ্ছেন  জিম্বাবুয়ে  ক্রিকেট দলের  সাবেক অধিনায়ক  ব্রেন্ডন টেইলর।  ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলকে(আইসিসি) তাৎক্ষনিকভাবে  না জানানোয় নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছেন  টেইলর। 
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে  চার পৃষ্ঠার এক বিবৃতি দিয়ে বিষয়টি নিজেই নিশ্চিত করেছেন টেইলর। তবে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কোন কিছু জানায়নি আইসিসি।
টেইলর জানান, স্পন্সরশিপ ও জিম্বাবুয়েতে একটি টি-টোয়েন্টি লিগ চালু করার বিষয়ে আলোচনার জন্য ২০১৯ সালের অক্টোবরে তাকে ভারতে ডেকেছিল এক ভারতীয় ব্যবসায়ী। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয় এবং ভারতে আসার জন্য ১৫ হাজার মার্কিন ডলারও দেওয়া হয়। যা ছিল মুলত  স্পট ফিক্সিং করার প্রখম ধাপ। আলোচনা শেষে রাতের পার্টিতে নিষিদ্ধ মাদক হিরোইন সেবন করিয়ে ভিডিও ধারণ করে তারা। এরপরই ব্ল্যাকমেইলিং শুরু হয়েছিলো। আর ‘ব্ল্যাকমেইল করে’ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে স্পট ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয় টেইলরকে।
টেইলর বলেন, ‘স্পন্সরশিপ ও জিম্বাবুয়েতে একটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট  শুরুর বিষয়ে আলোচনা করতে ২০১৯ সালের অক্টোবরের শেষের দিকে একজন ভারতীয় ব্যবসায়ী আমাকে ভারতে যেতে অনুরোধ করেন। বলা হয়, এজন্য আমাকে ১৫ হাজার ডলার দেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রায় দুই বছর ধরে এই বোঝা বয়ে নিয়ে চলেছি আমি। আমাকে অন্ধকার এক জগতে নিয়ে গেছে এটি, মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। সম্প্রতি কাছের বন্ধু ও পরিবারের কাছে এ ঘটনা খুলে বলেছি। তবে যে সমর্থন ও ভালোবাসা পেয়েছি, তাতে মনে হয়েছে শুরুতে অতিরিক্ত বিব্রত বোধ করেছিলাম।’
‘দুশ্চিন্তা যে হয়নি, সেটি বলবো না। তবে সে সময়ে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট থেকে প্রায় ৬ মাসের বেতন পাইনি আমরা। জিম্বাবুয়ের হয়ে  খেলা চালিয়ে যেতে পারবো কি সেটাও প্রশ্নসাপেক্ষ ছিল। ফলে আমি ভারতে গেলাম, কথামতো আলোচনা হলো। হোটেলে শেষ রাতে ওই ব্যবসায়ী ও সহকর্মীরা আমাকে এক নৈশভোজে নিয়ে গেলেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মদ্যপান করেছিলাম, এমন সময় আমাকে প্রকাশ্যে কোকেন নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়, যেটা তারাও নিচ্ছিল। আমিও রাজি হয়ে যাই। অসংখ্যবার এরপর এটা নিয়ে ভেবেছি, সে রাতের ঘটনাপ্রবাহ মনে করে এখনো অসুস্থ বোধ করি এবং আমাকে কিভাবে বোকা বানিয়েছিলো’
‘পরদিন সেই মানুষগুলো আমার হোটেল রুমে ছুটে আসে, আমার কোকেন নেওয়া অবস্থার একটা ভিডিও দেখায়। এরপর বলা হয়, আমি যদি তাদের কথা মত আন্তর্জাতিক ম্যাচে স্পট ফিক্সিং না করি, তাহলে তারা এ ভিডিও জনসম্মুখে ছেড়ে দিবে এবং আমি ফেঁসে যাই। আমার রুমে ছয়জনকে দেখে নিজের নিরাপত্তা নিয়েও চিন্তায় পড়ি। আমি ফাঁদে পা দিয়েছি বলে মনে হয়। মনে হচ্ছিল, ইচ্ছাকৃতভাবে এমন একটা পরিস্থিতির মধ্যে নিজেকে ফেলে দিয়েছি, যা আমার  ক্যারিয়ার শেষ  করে দেবে।’
‘এরপর  আমাকে ১৫ হাজার মার্কিন ডলার দিয়ে বলা হয়, এটা স্পট ফিক্সিংয়ের জন্য অগ্রিম। বাকি কাজ শেষ হলে অতিরিক্ত ২০ হাজার মার্কিন ডলার দেওয়া হবে। আমি টাকাটা গ্রহণ করি, কারন আমি যেন ভারত ছাড়তে পারি। আমার মনে হয়েছিল এ ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না, না বলারও সুযোগ ছিলো না। আমার শুধু মনে হয়েছিল, সে জায়গা থেকে বেরোতে হবে।’
‘তবে বাড়ি ফেরার পর  ঐ ঘটনা আমার মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। এরপর আমার এক ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। এজন্য এমিট্রিপটাইলিনের মতো কড়া ওষুধও দেয়া হয়।’
‘ঐ ব্যবসায়ী বিনিয়োগের বিনিময় চেয়েছিলো, যা আমি দিতে পারিনি এবং দিতামও না। এই অপরাধের বিষয়ে আইসিসিতে রিপোর্ট করতে আমার ৪ মাস সময় লাগে। আমি স্বীকার করি, সময়টা বেশি লেগেছিল, কিন্তু ভেবেছিলাম আমি সবাইকে রক্ষা করতে পারবো, বিশেষ করে আমার পরিবারকে। আমি আমার নিজের ইচ্ছায় আইসিসির কাছে গিয়েছিলাম এবং আশা করেছিলাম, আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে সত্যিকারে ভয়ের ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করতে পারলে, তারা এই দেরি করার কারণটা বুঝতে পারবে।’
‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে, তারা বুঝতে পারেনি। তবে এক্ষেত্রে নিজের অজ্ঞতার কথা বলে আমি পার পাবো না। দুর্নীতিবিরোধী অনেক সেমিনারে ছিলাম আমি, আমরা জানি, কখন রিপোর্ট করতে হয়।’
‘আমি বলতে চাই আমি কখনই স্পট ফিক্সিংয়ের সাথে জড়িত ছিলাম না। আমি অনেক কিছু হতে পারি, কিন্তু আমি প্রতারক নই। সুন্দর এই ক্রিকেট খেলাটির প্রতি আমার ভালোবাসা অনেক বেশি।’
‘অনেকেই বলছে, আইসিসি আমাকে কয়েক বছরের জন্য আমাকে নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে। আমি বিনীতভাবে তা মেনে নিয়েছি এবং আশা করি, আমার গল্পটা ক্রিকেটারদের আগেভাগেই এমন কোন প্রস্তাবের বিষয়ে রিপোর্ট করার ব্যাপারে উৎসাহিত করবে।’
‘আমার জীবনকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে ২৫ জানুয়ারি থেকে আমি একটি পুনর্বাসনকেন্দ্রে যোগ দিচ্ছি। আমাকে এই গল্পটা বলতে হচ্ছে কারণ, আমি জানি মানুষ আমার কথা শুনতে চাইবে। অনেক সপ্তাহ আমি দূরে থাকব এবং ভালো হয়ে ওঠার চেষ্টা করবো।’
‘আশা করি, আমার গল্পটা যারা শুনবে তারা  উপকৃত হবে, সহায়তাও পাবে।’
দেশের হয়ে ৩৪ টেস্টে ২৩২০ রান, ২০৫ ওয়ানডেতে ৬৬৮৪ রান এবং ৪৫টি টি-টোয়েন্টিতে ৯৩৪ রান করেন ৩৫ বছর বয়সী টেইলর। ২০১১ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে তিন ফরম্যাটে বিভিন্ন মেয়াদে ধিনায়ক ছিলেন টেইলর। 
২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর সাকিবের ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পাবার ঘটনাটি বিশ^ ক্রিকেটে ছড়িয়ে পড়ে। পরে আইসিসি থেকে দু’বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞা পান সাকিব। এরমধ্যে এক বছর নিষিদ্ধ ছিলেন সাকিব।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
#
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat